সিনেমার অশ্লীলতা এখন দেখা যাচ্ছে নাটকে

পিবিএ ডেস্কঃ সারা বছর যেখানে নাটকের গল্প ও মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে সেখানে এখন অহরহ অশ্লীল নাটক দেখা যাচ্ছে। সেগুলো টিভিতে প্রচারও হচ্ছে। কখনো কখনো ইউটিউবে সাড়া পেয়ে প্রচারে যাচ্ছে টেলিভিশন পর্দাতেও।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলা চলচ্চিত্রে ঝেঁকে বসেছিল অশ্লীলতা। সেই সময়ে কাজ করা অনেক শিল্পীর নামেই ছিলো অশ্লীল অভিযোগ এবং তাদের অনেকেই এখন চিত্রপাড়ার বাইরে। একটু একটু করে যখন চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি অশ্লীলতা থেকে বের হয়ে মানের দিকে উন্নত হতে শুরু করলো তখনই সেই অশ্লীলতা ঝেঁকে বসলো টিভি নাটক ও অনলাইনে প্রচারিত কন্টেন্টে। মানহীন কাজ ও আবেদনময়ী রুপে সেখানে দেখা মেলে অনেক শিল্পীদের।

অনেক সময় সাউন্ড অফ করে এর চেয়েও জঘন্য শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে নাটকে। এসব কন্টেন্ট থেকে সুড়সুড়ি বিনোদন দিয়ে আলোচনায় থাকাটাকেই ব্রত করে নিয়েছেন নির্মাতারা। কতিপয় শিল্পীও নিজেদের দায়বোধের জায়গা থেকে সরে গিয়ে এসব অবান্তর-অশালীন সংলাপ জড়াচ্ছেন কিছু টাকার লোভে পড়ে।

মাঝে কমেডি নাটকের একটা জোয়ার গিয়েছে। সেখানে দেখা যেত কারণ ও যুক্তি ছাড়াই জোর করে কাতুকুতু দিয়ে দর্শক হাসানোর বৃথা চেষ্টায় সংলাপ দিতেন নাট্যকার এবং সেই সংলাপে অবলীলায় অভিনয় করছেন অভিনেতা অভিনেত্রীরা। নাটকের নাম থেকে শুরু করে পোস্টার, প্রচারণা সবকিছুতেই থাকতো কমেডির ছাপ। জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরীর মতো জাঁদরেল অভিনেতারা ছিলেন সেই কমেডির সবচেয়ে বড় তারকা। এসব নিয়ে সমালোচনার শেষ ছিলো না। দর্শকদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় নির্মাতারা নাটকের হালচিত্র অনেকটা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যার কারণে এখন খুব একটা কমেডির নামে ভাঁড়ামো দেখা যায় না।

কিন্তু ঝকঝকে নির্মাণে সিরিয়াস গল্পের নামে এখন শুরু হয়েছে অশ্লীল গল্প ও সংলাপের রাজত্ব। যা নিয়ে শংকায় টিভি মিডিয়ার রুচিশীল শিল্পী-কলাকুশলী ও দর্শক। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে মুখও খুলছেন।

টেলিভিশনকে বলা হয় ড্রয়িং রুম মিডিয়া। পরিবারের সবাই তার মাধ্যমে বিনোদিত হবে। কিন্তু এখন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে নাটক দেখতে বসে ক্রমেই বিব্রত হন বাবা-মা। সন্তানের সঙ্গে টিভি সেটের সামনে বসতে ভয় পান। হঠাৎ করে সামনে চলে আসা নাটকের অশ্লীল সংলাপ ও অশ্লীল দৃশ্যে বিব্রত সবাই। অনেক নাটকের সংলাপ ও পোশাকে রয়েছে সস্তা যৌন সুড়সুড়ি। অনলাইন মাধ্যমের কারণে তো এখন সব জায়গা থেকেই দেখা যায় এসব। যার কারণে এগুলো ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে তা দেখা সম্ভব হচ্ছে না।

অনেক নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পীরা গল্পের প্রয়োজনে এমন পোশাক আর ভাষা ব্যবহার করা হয় বলে দাবি করে দায় এড়িয়ে যান। কেউ কেউ এটাকে সময়ের ট্রেন্ড বলেও আনন্দ পান। প্রশ্ন হলো ট্রেন্ডটা কারা তৈরি করে? ট্রেন্ড কার জন্য তৈরি করা হয়? সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মিডিয়ার যে গুরুত্ব ও দায়িত্ব তার সঙ্গে এইসব মিডিয়া ট্রেন্ড কতোটা যৌক্তিক সেটাও প্রশ্নাতীত।

অনেকে বলে থাকেন সিনেমার অশ্লীলতা এখন নাটকে এসে ঢুকেছে। কিছু নির্মাতা বেডসিন-ধর্ষন দৃশ্যসহ আরও অনেক স্পর্শকাতর বিষয় নাটকের মাধ্যমে সবাইকে দেখাচ্ছেন এবং এই দেখানোটাকে তারা বিশেষ যোগ্যতা ও স্মার্টনিটি বলে ধরে নিয়েছেন।

এখন প্রায় চ্যানেলেই অপুর্ব বা আফরান নিশোর সঙ্গে মেহজাবীন চৌধুরী, তানজিন তিশারই দেখা মেলে ন্যাকা ন্যাকা প্রেমিকা বা তরুণী বউ চরিত্রে। এই চার তারকাকেই জুটি বেঁধে প্রায় একই ধাঁচের নাটক দেখা যায়। ফলে একঘেয়েমিতে আক্রান্ত দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নাটক থেকে। যার প্রভাব দেখা গেল সদ্য শেষ হওয়া রোজার ঈদে।

পিবিএ/এমএস

আরও পড়ুন...