রসিকে স্বাস্থ্য সেবার মডেল ইপিআই

পিবিএ: রংপুর: রংপুর সিটি করপোরেশনে (রসিক) প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিকতার ছোয়ায় বদলে গেছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি-ইপিআই। মা ও নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে মডেল হিসেবে সারা ফেলেছে এখানকার স্বাস্থ্য বিভাগ। ডিজিটালের ছোয়া বদলে দিয়েছে বহুদিনের সনাতন পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের প্রক্রিয়া। এখন জনসচেতনতা বাড়ানোর সাথে চলছে উদ্বুদ্ধকরণ প্রণোদনা প্রদান।


রসিকের স্বাস্থ্য বিভাগে সরেজমিনে দেখা গেছে, আগের মত নবজাতক শিশুর টিকা গ্রহণ নিয়ে কোন বিড়ম্বনা নেই। বন্ধ হয়ে গেছে শিশুদের নিয়ে টিকা দিতে আসা নারীদের কালক্ষেপণের অভিযোগ। সব কিছুতে লেগেছে প্রযুক্তিগত ছোয়া। টিকা দিতে এসে জোর পূর্বক আগে সেবা গ্রহণ করা নিয়ে এক সময় উদ্ভট পরিস্থিতি তৈরি হত। এখন তা নেই।

বর্তমানে কাউন্ডার হতে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়। টোকেনে দেয়া সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সেবা নিচ্ছেন মা ও শিশুরা। শুধু তাই নয়, টিকাদানে আলাদা ও নিরাপদ কক্ষ রাখা হয়েছে। সুবিধাভোগী গর্ভবতি, নবজাতক, মা ও শিশুর সেবার মান বাড়াতে ও নিয়মিত টিকা গ্রহণে নেয়া হয়েছে নানান উদ্যোগ।

এখন টিকা গ্রহণের তারিখ আসার আগে এবং পরে মোবাইল ফোনে এসএমএস দেয়া হয়। সেবা গ্রহণকারি মা ও শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে প্রণোদনা পুরস্কার।
সময়মত সকল টিকা গ্রহণকারি মা ও শিশুকে দেয়া হচ্ছে সার্টিফিকেট। সব মিলিয়ে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ডাটাবেজ তৈরির মাধ্যমে আরো সহজ করা হয়েছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি।

নিয়মিত স্বাস্থ্যকর্মি, চিকিৎসক, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পাড়া-মহল্লায়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং বস্তিতে উঠান বৈঠক ও মা সমাবেশের মাধ্যমে ইপিআই এর সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়াও প্রচার কাজে এখন ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন মা ও শিশুরা স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ পরিবেশে বিনোদন সুবিধাসহ ইপিআই সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।

সন্তানকে নিয়ে টিকা নিতে আসা লাভলী বেগম বলেন, ‘সুন্দর পরিবেশে বাচ্চাকে টিকা নিলাম। আগের মত এখন টিকা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না। সবকিছু ডিজিটাল হয়েছে। বাচ্চাকে টিকা দেয়ার পরপরই একটা এসএমএম ফোনে এসেছে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়ন ও এটুআই প্রকল্পের আওতায় রংপুর সিটি করপোরেশনই প্রথম এই মডেল সেবা দিচ্ছেন। চলতি বছরের আগস্টে সেবাগ্রহীতা মা ও শিশুর তথ্যসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যসেবা অ্যাপস ব্যবহারের সুবিধাও পাবেন নগরবাসী।

এব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও এর রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক ডা. জুবায়ের আল মামুন বলেন, ‘টিকাদান প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল ও ঝামেলামুক্ত করতে আমরা এধরণের উদ্যোগ নিয়েছি। রংপুর সিটি করপোরেশন এধরণের সেবা প্রদানে সারাদেশের মধ্যে মডেল। আগামিতে ইপিআই-কে আরো তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর করা হবে।

অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান এবনে তাজ বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণকারি মানুষদের মধ্য সচেতনতা সৃষ্টি করা কঠিন কাজ। আমরা আধুনিক সুবিধা সম্বলিত কার্যক্রম পরিচালনা করছি। সেবা গ্রহণে মা ও শিশুসহ পরিবারগুলোকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রামে স্বাস্থ্যকর্মি গেলে সবাই একত্রিত হয়। স্বাস্থ্যকর্মির কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করেন। কিন্তু শহরে এর উল্টো চিত্র। এখানে অনেক সময় বাড়ি বাড়ি গিয়েও সুবিধা ভোগিদের দেখা যায় না। স্বাস্থ্যকর্মিদের অনেক কষ্ট করতে হয়। সেই কষ্ট ও বিড়ম্বনা এখন কমে এসেছে।

পিবিএ/এমএইচ/হক

আরও পড়ুন...