ইলিশ না পেয়ে হতাশ হলেন মেঘনা পারের জেলেরা

পদ্মা-মেঘনা নদী উপকূলীয় এলাকায় চাঁদপুরের ৫১ হাজার ১৯০ নিবন্ধিত জেলে পরিবার। বছরের অধিকাংশ সময় নদীতে থেকে মাছ আহরণ করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করে। মা ইলিশ রক্ষায় আগস্ট মাসে বন্ধ থাকে ২২ দিন। এছাড়া বাকি সময়ে নদীতে মাছ আহরণে কোনো বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু এ বছর মার্চ-এপ্রিলের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা ইলিশ না পেয়ে এখন হতাশ। কাক্সিক্ষত ইলিশ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত।

সরেজমিন চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও সদর উপজেলায় জেলেপাড়াগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ জেলেই বেকার সময় পার করছেন। কেউ নৌকা মেরামত করছেন, আবার কেউ জাল মেরামত করছেন। নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও মাছ আহণ না করে বেকার সময় কাটাচ্ছেন চা দোকানে অথবা আড্ডা দিয়ে। জাটকা রক্ষা কর্মসূচির সময় মৌসুমী জেলেরা অধিক পরিমাণে জাটকা ইলিশ নিধন করায় নদী এখন প্রায় মাছ শূন্য। আর যে পরিমাণ পাওয়া যায় তা খরচ উঠানো অসম্ভব।

চাঁদপুর মৎস্যজীবী লীগ নেতা মো. তছলিম বেপারী বলেন, ‘ইলিশ আমাদের জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য। ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। কিন্তু বিশাল নদী এলাকায় হাজার হাজার জেলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমাদের জেলার জেলেরা নিষিদ্ধ সময় মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকলেও বাহিরের জেলার জেলেরা এসে মাছ আহরণ করে। এছাড়া নদীর পানি দূষণ, চর জেগে উঠা ইত্যাদি কারণে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের বিচরণ কমেছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার এগিয়ে এলে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বছর জুড়ে রূপালী ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করা যাবে।

মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর এলাকার জেলে সিরাজ প্রধানিয়া জানান, সাগর থেকে মেঘনা নদীতে ইলিশ আসার পথে বিভিন্ন বাধার সৃষ্টি হয়। চর জেগে উঠা পানি দূষণের কারণে আমার আগের মতো রূপালী ইলিশ পাচ্ছি না। এ কারণে আমাদের উপজেলার অনেক জেলে এখন বেকার রয়েছেন।

সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের জেলে ইসমাইল মিয়াজী ও রফিক মিয়া জানান, ইলিশ পাওয়ার আশায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নতুন জাল তৈরি করেছি। কিন্তু ইলিশের দেখা মিলছে না। আমরা অন্য পেশায় কাজ করেও অভ্যস্ত নাই। তাই ইলিশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। নদীতে ইলিশের বিচরণ শুরু হলে আহরণে নামবো।

সদরের হানারচর ইউনিয়নের মৎস্য ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবু সৈয়াল জানান, আমাদের এলাকায় প্রায় ১০০ জেলে পরিবার রয়েছে। প্রতিদিনই ইলিশ পাওয়ার আশায় নদীতে নামেন। এক নৌকায় কমপক্ষে সাত থেকে নয়জন জেলে থাকেন। জালানি খরচসহ যে পরিমাণ খরচ হয়, তাতে যে ইলিশ পাওয়া যায় তাতে জনপ্রতি ২০০ টাকা করেও পায় না। বৃষ্টি ও পাহাড়ি পানি নামলে ইলিশের দেখা মিলবে আশা করছি।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকি বলেন, মে ও জুন মাসে ইলিশ একটু কমেই থাকে। কারণ মিঠা পানিতে আসা ছোট ইলিশগুলো এ সময়ে সাগরের দিকে চলে যায়। আবার আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে আসে। আশা করি ওই সময় জেলেরা ইলিশ পাবে। এখনো ইলিশ পায় তবে সংখ্যায় খুব কম এবং সাইজে ছোট।

আরও পড়ুন...