শিক্ষার্থীরা মানসিক সংকটের সময় বাবা-মাকে পাশে চায়

পিবিএ ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে নানা রকম মানসিক সংকট দেখা দেয়, হতাশায় ভোগে ব্যাপক সংখ্যক কিশোর তরুণ। অনেকেই বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। কিন্তু যখন এই অস্থির সময় পার করে, কার কাছে যেতে চায় তারা?

ব্রিটেনে সম্প্রতি এক বার্ষিক জরিপে দেখা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিলে দেশটির দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী বিষয়টি তাদের বাবা-মাকে জানাতে চায় তারা। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দেশটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার বিষয়টি একটি দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে বলেও এই জরিপে উঠে এসেছে।

জরিপের ফল কী বলছে?

জরিপে অংশ নেয়া ইংল্যান্ডের ১৪ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ তাদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ইংল্যান্ডের উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ হায়ার এডুকেশন পলিসি ইন্সটিটিউট এন্ড এডভান্স এইচই জরিপটি প্রকাশ করেছে।

ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ওপর এটিই সবচেয়ে বড় বার্ষিক প্রতিবেদন। এই জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশটির মাত্র ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের সুখী হিসেবে উল্লেখ করেছে। ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী জীবনকে মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এছাড়া মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে পাওয়া গেছে যারা জীবন নিয়ে কম উদ্বেগে ভোগেন।

জরিপে জানা গেছে যে, ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই মনে করেন যে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য যখন চরম-খারাপের দিকে চলে যায়, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত সেটি ছাত্র-ছাত্রীদের বাবা-মাকে অবহিত করা। অন্যদিকে, ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোন অবস্থাতেই শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়েদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত নয়।

আত্মহত্যা ঠেকাতে উদ্যোগ

গত কয়েক বছরে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ফলে সেখানে এখন এমন প্রকল্প নেয়া হয়েছে যে, কোনো শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হলে তার বাবা-মা বা একজন বিশ্বস্ত অভিভাবককে সে বিষয়ে অবহিত করা হবে।

বেন মারি একজন বাবা। বিস্ট্রল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার ছেলে জেমস আত্মহত্যা করেছে। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে মি. মারি ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কাজ করেছেন। মি. মারি বলছেন, ছেলেমেয়েদের যখন মানসিক সমস্যা হবে, তারা যেন এ নিয়ে বাবা মায়েদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলে সে বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করতে হবে।

হায়ার এডুকেশন পলিসি ইন্সটিটিউটের পরিচালক নিক হিলম্যান বলেছেন, ‘পরিবার ও বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে’ থাকার কারণে এবং আরো নানা কারণে শিক্ষার্থীরা যে কত চাপের মধ্যে থাকে সেটিই উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

বাকিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার অ্যান্টনি সেলডম বলেছেন, শিক্ষার্থীরা তাদের বাবা-মা বা অভিভাবকদেরকে সব তথ্য জানাতে আগ্রহী নয় বলে যে ধারণা প্রচলিত ছিল, সেটি যে মিথ্যে, সেটিই প্রমাণ হয়েছে এই জরিপে।

চাপের কারণ

এই জরিপে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি বা পড়ালেখার খরচ নিয়ে শিক্ষার্থীরা উদ্বেগে ভোগে। এদের মধ্যে যাদের পড়ার খরচ তারা নিজেরাই বহন করে, তাদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে।

শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্টি বিষয়ক এই জরিপ থেকে জানা যায়, স্কটল্যান্ড যেখানে স্কটিশ শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ফি নেই, সেখানে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের তুলনায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের উচ্চতর মূল্যবোধের অধিকারী মনে কর। সেখানকার শিক্ষার্থীরা বরং শিক্ষার মান নিয়ে বেশি মনোযোগী হতে পারে।

এছাড়া পরিবার, পড়ালেখার চাপ, বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং প্রণয়ঘটিত ব্যাপার নিয়েও মানসিক চাপে থাকে শিক্ষার্থীরা।

 

পিবিএ/বিএইচ

আরও পড়ুন...