বিষ দিয়ে পাখি মারছে, এ কেমন মানবপশু

পিবিএ ডেস্ক: ঝালকাঠির রাজাপুর সদর ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম আঙ্গারিয়া। জাঙ্গালিয়া নদীর পাড়ঘেঁষে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ। ধানক্ষেতের মধ্যে ছোট ছোট ফলদ ও বনজ গাছের বাগানে বাসা বেঁধেছে পাখির দল। বৃষ্টি ছোঁয়ায় প্রকৃতি যেন আরো স্নিগ্ধ হয়েছে এখানে। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যের মাঝে লুকিয়ে আছে এক নিষ্ঠুরতার গল্প।

স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামে বিষটোপ দিয়ে পাখি নিধন করছে অসাধু একটি চক্র। চক্রটি ইঁদুর মারার বিষ ধান ও গমের সাথে মিশিয়ে তা ছড়িয়ে রাখে ধানক্ষেতের পাশে। সেই বিষাক্ত টোপ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অসহায় পাখিগুলো। এর পর মরা পাখিগুলো সংগ্রহ করে পাকস্থলী ফেলে দিয়ে তা রান্না করে খাওয়া হয়। এভাবেই শত শত বন্য ঘুঘু ও পোষা কবুতর নিধন করছে চক্রের সদস্যরা। এ ছাড়া ফাঁদ পেতে ধরা হয় বক, ডাহুক, মাছরাঙাসহ ধানক্ষেতে আসা নানা প্রজাতির জলজ পাখি।

সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশকিছু পোষা কবুতর মারা যাওয়ায় এবং ধানক্ষেতের পাশে মরা ঘুঘু পড়ে থাকতে দেখে বিষয়টি গ্রামবাসীর নজরে আসে। মারা যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে বিষ দিয়ে পাখি নিধনের এমন নিষ্ঠুর কাহিনি। খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. সারোয়ার হোসেন।

গতকাল শুক্রবার বিকালে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা মো. কাইউম বলেন, গত তিন মাসে আমার অর্ধশত কবুতর নিখোঁজ হয়েছে। এ ছাড়া গত দুই দিনে সংগ্রহ করা ১৭টি মরা পাখির মধ্যে আমার পোষা ৯টি কবুতর রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ধানক্ষেতের পাশে বাগান থেকে কুকুরের দল মরা ঘুঘু ও কবুতর নিয়ে টানাটানি করছিল। পরে পাখিগুলোর মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি, আঙ্গারিয়া গ্রামের মো. মনির হোসেন ওরফে গুগলা মনির ও তার সহযোগীরা বিষ দিয়ে পাখিগুলো হত্যা করছে। বিষ মাখানো টোপ খেয়ে পাখিগুলো বেসামাল হয়ে পড়লে তা ধরে নিয়ে রান্না করে খায় তারা। তবে সব পাখি ওদের হাতে ধরা পড়ে না। কিছু পাখি দূরে গিয়ে মারা যায়। এ ছাড়া শীত মৌসুমে খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার অভিযোগ রয়েছে মনিরের বিরুদ্ধে।

সত্যনগর গ্রামের বাসিন্দা ও বরিশাল বিএম কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. পাপ্পু মৃধা বলেন, নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে মনির গ্রামে এসব অপকর্ম করছে। কেউ নিষেধ করলে তাকে হুমকি দেয়। তবে এবার গ্রামের সবাই এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে একজোট হয়েছি। প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করব। প্রকৃতি রক্ষা এবং এই অপকর্ম বন্ধ করতে প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেব।

রাজাপুর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশ এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর পর যদি নির্বিচারে পাখি নিধন করা হয়, তবে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই পাখি হত্যা বন্ধে প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, পাখি হত্যার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি পাখিগুলোকে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পাখি হত্যা করলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এক বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। একই ব্যক্তি আবারো ওই অপরাধ করলে দণ্ড দ্বিগুষ হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. মনির হোসেন বলেন, ধানক্ষেতে এখন বীজতলা তৈরির সময়। পাখিগুলো বীজধান খেয়ে ফেলে। তাই হয়তো আমার ছোট ছেলে না বুঝে এই কাজ করেছে। যাদের কবুতর মারা গেছে আমি তাদের ক্ষতিপূরণ দেব।

 

পিবিএ/বিএইচ

আরও পড়ুন...