পিবিএ, শেরপুর: শেরপুরে এক অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে নকলা থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আমিনুল ইসলাম।
আগামী ১৮ জুন নকলা উপজেলা নির্বাচনের পর তাকে প্রত্যাহার করা হবে বলে জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে একই ঘটনায় নকলা থানার এসআই ওমর ফারুককে প্রত্যাহার করে শেরপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি সকালে সাংবাদিকদের বলেন, নকলা থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজকে প্রত্যাহারের আদেশ হয়েছে। তবে আমরা এখনও আদেশের কপি পাইনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. বিল্লাল হোসেনও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নকলা থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজকে প্রত্যাহারের আদেশ হয়েছে বলে জেনেছি। তবে এখনও অফিসিয়াল কোনো আদেশ আমরা হাতে পাইনি।
উল্লেখ্য, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ১০ মে সকালে কায়দা গ্রামের কৃষক শফিউল্লাহর স্ত্রী ও স্থানীয় চন্দ্রকোনা কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ডলি খানমকে প্রতিপক্ষের লোকজন গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন এবং মোবাইলে সেই ভিডিও ধারণ করেন। নির্যাতনে ডলির অকাল গর্ভপাত হয়।
নকলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করলেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
ঘটনার এক মাস পর ১১ জুন নির্যাতনের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় জেলাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে গত ১২ জুন নকলা থানা পুলিশ নির্যাতিতাকে বাদী করে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। ওই মামলায় নাসিমা আক্তার (৪০) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করলে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে।
ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ড. আক্কাছ উদ্দিন ভুঁইয়া বৃহস্পতিবার বিকেলে নকলার কায়দা এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি নির্যাতিতা গৃহবধূ ও তাঁর স্বামীসহ স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাছ উদ্দিন ভূইয়া, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং আসামিদের বাইরে আরও কারো মদদ থাকলে তাদেরকেও দ্রুত আইনের আওতায় আনার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাছ উদ্দিন ভুঁইয়ার পরিদর্শনের সময় শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম, নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান, জেলা মহিলা পরিষদ সভানেত্রী জয়শ্রী দাস লক্ষ্মী উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাছ উদ্দিন ভুঁইয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ভিকটিম পরিবারের সাথে কথা বলেন।
এদিকে, জেলা পুলিশের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও শুক্রবার পুলিশ সুপারের নিকট তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
তদন্তে নকলা থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ এবং এসআই ওমর ফারুকের কর্তব্যে অবহেলা ও গাফলতির বিষয়টি উঠে আসে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
পিবিএ/এএইচ