যশোর ফায়ার সার্ভিস ভবনের বেহাল দশা

পিবিএ,যশোর: অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে সংস্কার না করায় যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের পুরাতন দোতলা ভবনে ও ফায়ারম্যানদের জরাজীর্ণ ব্যারাকের বিভিন্ন স্থানে বিপদজনক ফাটল, বীমের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ে রড বের হয়ে রয়েছে।

নির্মাণের এত বছরেও এখানে উল্লেখযোগ্য কোন সংস্কার কাজও করা হয়নি। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ এই ভবনটি ধ্বসে পড়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে। যে কোন সময় বিল্ডিং ধ্বসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা দেখা দিতে পারে এমন আতঙ্কে রয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সূত্র মতে, ১৯৬৪ সালে যশোর শহরের ভোলা ট্যাংক রোডে দুই একর জায়গার উপর অবস্থিত হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস। জনবলের অভাব না থাকলেও ৪০ বছরের পুরাতন দুটি গাড়ি ও কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে এ অফিসের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনটির নিচতলায় রয়েছে যশোর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তার অফিস কক্ষসহ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাখার জায়গা। ২য় তলায় রয়েছে এখানকার কর্মকর্তার বাসস্থান। পাশের ভবনে স্টাফদের ব্যারাক। এখানে নিয়মিতভাবে বসবাস করেন ৩৫ জন । ব্যারাকে বসবাসকারীদের মধ্যে রয়েছেন স্টেশন অফিসার, ফায়ারম্যান, টিম লিডার, গাড়ি চালক, বাবুর্চি ও ঝাড়ুদার। এই কক্ষগুলোর বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খুলে রড বেরিয়ে গেছে বিভিন্ন জায়গায়। শুধু তাই নয়, গাড়ি রাখার জায়গায় ও স্টাফদের ব্যারাকের বীমের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়ে রড বের হয়ে আছে। তাছাড়া স্টাফদের ব্যবহারের জন্য যে বাথরুমগুলো রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও করুণ। বাথরুমের দরজা ভাঙা, কমোড ব্যবহারের অনুপযোগী। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নাজুক। পুরনো আমলের সেই ওয়্যারিং দিয়ে চলছে ভারি ভারি যন্ত্রপাতি। স্টেশনের টাওয়ারও বহু পুরনো। এক দিকে ঝুঁকে পড়েছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজেরা অগ্নিকান্ড, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় বিপন্ন মানুষের পাশে থাকেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও এখন তারা নিজেরাই আতঙ্কে সময় পার করছেন। বর্ষাকালে ব্যারাকে রুমে হাঁটু পানি জমে থাকে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় তার মধ্যে জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকতে হয় তাদের।
কর্মকর্তারা জানান, ভবনটির ভগ্নদশা সম্পর্কে কয়েকবার লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত এই ভবনের মেরামত কিংবা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনটি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, অগ্নিনির্বাপণের জন্য এখানে যে দুইটি গাড়ি রয়েছে সেগুলোর বয়স ৩৫-৪০ বছরের পুরাতন গাড়ি হওয়ায় জেলার কোথাও আগুন লাগলে দ্রুততম সময় পৌঁছাতে পারে না। বহুতল ভবনে আগুন লাগলে আগুন নেভানোর মতো অত্যাধুনিক কোনো গাড়ি বা সরঞ্জাম নেই এই স্টেশনটির।
এ বিষয়ে যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, বর্তমানে তাদের যে ফায়ার লেডার গাড়ি রয়েছে, এটি সর্বোচ্চ তিন থেকে চারতলা ভবনের আগুন নেভানোর ক্ষমতা রাখে। যার কারণে জেলার শহর ও শহরতলীর বহুতল ভবন ও মার্কেটগুলো প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে রয়েছে। পুরাতন গাড়ি নিয়েই বর্তমান সময়ের অগ্নিকা-গুলো মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ভবনগুলো অনেক পুরনো। ভবনটির দুরবস্থার কারণে যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কিত থাকেন সবসময়। কিন্তু বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগের নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তিনি আরো বলেন, জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনটি ভেঙে আধুনিক ভবন নির্মাণ এবং অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদিসহ অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক গাড়ি বরাদ্দের মাধ্যমে স্টেশনকে মডেল স্টেশনে রূপান্তর করা দরকার।

পিবিএ/কেএইচ/হক

আরও পড়ুন...