পিবিএ ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও দিল্লিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের চাপের মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি না দেয়ায় মুসলিমদের মারধর ও নিগ্রহ করা হয়েছে। আজ (শনিবার) গণমাধ্যমে এসব কথা প্রকাশ্যে আসায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদে প্রকাশ, গত (বৃহস্পতিবার) কোলকাতার বালিগঞ্জ ও পার্কসার্কাস স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় মুসলিমরা উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে পড়েন। এসময়ই জোর করে তাদেরকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেয়ানোর চেষ্টাসহ টুপি-দাড়ি নিয়েও আপত্তি তোলা হয়। হামলাকারীরা বিনাপ্ররোচনায় তাদের উপরে চড়াও হয়ে টুপি, লম্বা দাড়ি চলবে না এবং ঢিলেঢালা পোশাক পাল্টানোর বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেয় বলে অভিযোগ।
এসময় ট্রেনের মধ্যে থাকা ‘হিন্দু সংহতি’ নামে উগ্রসংগঠনের সদস্যরা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান না দেওয়ায় তাদেরকে মারধর করলে তারা আহত হন। ওই ঘটনায় মারধরে আহত শাহরুফ হালদার নামে মাদ্রাসায় কর্মরত এক যুবকসহ মুহাম্মাদ নঈম লস্কর ও তার তিন ভাই, মোতাহার হালদার ও তারসঙ্গে আরও চারজন এবং ভোলা দাস নামে এক হকার আক্রান্ত হন।
অন্যদিকে, আসামের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বরপেটা জেলার হাউলিতে জোর করে এক মুসলিম যুবককে ‘জয়শ্রীরাম’ ও ‘পাকিস্তান মুর্দাবাদ’ শ্লোগান দিতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। এ ব্যাপারে ‘রাম সেনা’ সংগঠনের নেতা যোগি দেবজিত ডেকারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন ‘আমসু’।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, গত (বুধবার) রাতে হাউলির এক মুসলিম যুবক টোটো গড়ি চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। একই টোটোয় ছিলেন রামসেনা সংগঠনের নেতা যোগি দেবজিত ডেকার। এসময় আচমকা একটি জায়গায় তিনি টোটো থেকে নেমে গিয়ে বন্ধু বান্ধবদের জড়ো করে তার উপর মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এবং এক পর্যায়ে তাকে ‘জয় শ্রীরাম’ ও পাকিস্তান মুর্দাবাদ ধ্বনি দিতে বাধ্য করা হয়। এসময় ওই যুবক ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে অস্বীকার করায় তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ‘আমসু’র পক্ষ থেকে অবিলম্বে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে¸ দিল্লিতে মাওলানা মুহাম্মাদ মোমিন নামে এক আলেম ও মাদ্রাসার শিক্ষক ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে না চাওয়ায় তাঁকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মারায় তিনি আহত হয়েছেন। দিল্লির আমন বিহার এলাকায় গত (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরিয়ে মসজিদে যাওয়ার পথে একটি গাড়ির মধ্যে বসে থাকা ব্যক্তিরা তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বলে। ওই মাওলানা তা বলতে অস্বীকার করায় তারা তাঁকে গালি দেয়ার পাশাপাশি গড়ি দিয়ে ধাক্কা মারলে তিনি আহত হন। তিনি মাথায়, মুখে ও হাতে আঘাত পেয়েছেন। স্থানীয় মানুষজন পুলিশকে খবর দেন এবং তারাই ওই মাওলানাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই দিল্লির সংশ্লিষ্ট এলাকায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দিল্লি পুলিশ একটি দুর্ঘটনার মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখছে।
এসব বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুস সালাম আজ (শনিবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘এসব দুর্বৃত্তদের কাজ। উত্তেজনা সৃষ্টি করাই ওদের উদ্দেশ্য। ‘জয় শ্রীরাম’ তো কোনও ধর্মীয় ব্যাপার নয়। আর ধর্মীয় ব্যাপার হলেও সেটা অন্যের উপরে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে চাপিয়ে দিচ্ছে। মুসলিম এলাকায় তারা অন্য কিছু চাপাবে। সংসদে বিষয়টি দেখাও গেছে, কেউ ‘জয় শ্রীরাম’ বলছে, কেউ ‘আল্লাহু আকবর’ বলছে। এভাবে চলতে থাকলে তা দেশের জন্য খারাপ ইঙ্গিত বলে আমরা মনে করছি।’
পশ্চিমবঙ্গে আরও বেশি এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মুফতি আব্দুস সালাম আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮ টি আসন পাওয়ার পর থেকে ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়া প্রভৃতি এলাকায় সংখ্যালঘু মুসলিমরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে তিনি পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পিবিএ/এএইচ