যৌতুক সন্ত্রাস! ঘরে আটকে গৃহবধুকে স্বামীর নির্যাতন,পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার

পিবিএ,বাগাতিপাড়া ,নাটোর: নাটোরের বাগাতিপাড়ায় এক পাষন্ড স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে ঘরে আটকে রেখে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের সহায়তায় আহত অবস্থায় তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।


ঘটনার পর দু’দিন চিকিৎসা নিলেও সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার আশংখায় রোববার পর্যন্ত থানায় মামলা করেননি গৃহবধু।
ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের বাগাতিপাড়ার চকতকিনগর গ্রামে। পাষন্ড স্বামীর নাম সাইদুর রহমান। তিনি ওই গ্রামের সেলিম ফকিরের ছেলে। আহত গৃহবধু আমেনা খাতুন (২৫) উপজেলার বাটিকামারী গ্রামের খলিলুর রহমানের মেয়ে।
গৃহবধু আমেনা খাতুন জানান, প্রায় সাত বছর পূর্বে সাইদুর রহমানের সাথে তার বিয়ে হয়। গরীব দিনমুজুরের মেয়ে হওয়ায় সাইদুর তাকে পছন্দ করতো না। তাই বিয়ের পর থেকেই যৌতুক চেয়ে স্ত্রীকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করত স্বামী সাইদুর। তাছাড়াও বিভিন্ন সময় নানা কারণে আমেনা খাতুনকে নির্যাতন করতো সে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবাকে বলে মাঝে মধ্যেই যৌতুক এনে সাইদুরকে দেওয়া হতো।
কিন্তু এরপরও তার নির্যাতন থামেনি। গত ২ দিন আবারও স্বামী সাইদুর বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে দিতে বললে আমেনা খাতুন তাতে অসম্মতি জানান। তাতেই শুরু হয় তার ওপর নির্যাতন। এরপর ঘরের দরজা আটকে ঘরে থাকা পানির পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে তাকে আহত করে তার স্বামী সাইদুর। সে চিৎকার চেঁচামেচি করলেও তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এর আগেও তাকে টয়লেটে আটকে রেখে পেটানো হয়েছে বলে তিনি জানান । নির্যাতনের বিষয়ে তিনি থানায় কোন অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে আমেনা খাতুন বলেন, ‘ মামলা করলে যদি সংসার ভেঙ্গে যায়, তাই করিনি’।

আমেনার বাবা খলিলুর রহমান পিবিএকে বলেন, তিনি দিনমুজুরের কাজ করেন। মাঝে মধ্যেই যৌতুকের জন্য মেয়েকে পেটানো খবর পেতেন। কিন্তু গরীব হওয়ায় তিনি তার মেয়ের জামাইয়ের আবদার পুরণ করতে পারেননি। তারপরও যতটুকু পেরেছেন যৌতুক দিয়েছেন। সবশেষে কিছুদিন আগে বাড়ির দুটি ছাগল বিক্রি করে একটি ছোট গরু কিনে দিয়েছেন। এতেও খুশি ছিলো না মেয়ের জামাই। ঘটনার দিন স্থানীয়দের ফোন পেয়ে মেয়েকে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে পারেন। পরে গ্রাম্য প্রধানদের পরামর্শে থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ গিয়ে ঘরে আটকে রাখা তার মেয়েকে স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। এরপর বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা গ্রাম্য শালিশের মাধ্যমে আপোস-মিমাংসা করা হয়। কিন্তু মেয়ের সংসারের চিন্তা করে আবারও স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হয়। তবে এবারে তিনি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ পিপিএম জানান, গৃহবধুর বাবার কাছে জানতে পেরে পুলিশের এস আই আবু সেনা জোয়ার্দ্দারকে পাঠিয়ে চকতকি নগর গ্রামের স্বামী সাইদুরের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন অভিযোগ তিনি পাননি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

পিবিএ/ এফআর/হক

আরও পড়ুন...