জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হলেন জি এম কাদের

পিবিএ, ঢাকা: অসুস্থতা নিয়ে ঘরে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এক বিবৃতিতে দলে তার উত্তরসূরি হিসেবে ভাই জি এম কাদেরকে মনোনীত করেছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে জাতীয় পার্টিতে অস্থিরতা চলার মধ্যে ভোটের দুদিন পর মঙ্গলবার দলের প্যাডে নিজের স্বাক্ষরে এই বিবৃতি পাঠান।

তিনি বলেছেন, তার অবর্তমানে জি এম কাদেরই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন এবং কাউন্সিলে তিনিই হবেন চেয়ারম্যান।

সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পর আবার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন বলে গুঞ্জনের মধ্যে ৮৮ বছর বয়সী এরশাদের ‘জাতীয় পার্টির জন্য ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ শিরোনামের এই বিবৃতি এল।

কী কারণে এই বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ল, তা স্পষ্ট করেননি এরশাদ; বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পার্টির কোনো নেতারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার রাতে এই বিবৃতি আসার আগে দুপুরে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁর কথায়ও এমন কোনো আভাস ছিল না।

নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া দলটির মহাসচিব রাঙ্গাঁ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বুধবার তাদের সভাপতিমণ্ডলী বৈঠক করবে এবং ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে যে জাতীয় পার্টি সরকারে থাকবে, না কি বিরোধী দলে থাকবে।

জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরিক। দলের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর মহাজোটে আলোচনা করে জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান রাঙ্গাঁ।

সেই বৈঠকের আগে দিনই ছোট ভাই ও দলের কো চেয়ারম্যান কাদেরকে নিয়ে এরশাদের বিবৃতি এল।

“আমি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখছি, যে আমার অবর্তমানে বর্তমান কো চেয়ারম্যান জনাব গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করি, পার্টির জাতীয় কাউন্সিল আমার মতো তাকেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে পার্টির সার্বিক দায়িত্ব তাকে অর্পণ করবে। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি যত দিন দায়িত্ব পালন করব, ততদিন জি এম কাদের আমাকে সহযোগিতা করবেন।”

সিদ্ধান্ত বারবার পরিবর্তনের জন্য সমালোচিত এরশাদ এর আগে ২০১৬ সালেও ভাইকে দলে কো চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করে তাতে ভাইকে বসিয়ে বলেছিলেন, “আমার অবর্তমানে দলের হালও ধরবেন তিনি (জি এম কাদের)।”

তখন দলের মধ্যে একাংশ ক্ষোভ দেখে পরে সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেন এরশাদ। এরপর স্ত্রী রওশন এরশাদকে দলে ভাইয়ের উপরের স্থানে তুলতে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করে তাকে সেই পদে বসান তিনি।

তার আগে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করেছিলেন এরশাদ। রওশন সমর্থক হিসেবে পরিচিত বাবলুকে কটাক্ষ করে এক মন্তব্যের জন্য তখন একবার ভাই কাদেরকে সতর্ক করে নোটিস পাঠিয়েছিলেন এরশাদ।

২০১৪ সালে এরশাদ দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর ভাইয়ের পক্ষেই ছিলেন শেখ হাসিনার ২০০৮ সালের সরকারের মন্ত্রী কাদের। অন্যদিকে ভোটে অংশ নেওয়ার পথে এগিয়ে যান রওশন। আর নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে এরশাদ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সংসদ সদস্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও মনোনীত হন।

তারপর বিএনপিবিহীন সংসদে রওশন বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব নিয়ে বলেন, যা কিছু ঘটেছে, এরশাদের ‘সম্মতিতেই’ হয়েছে। অন্যদিকে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় এরশাদের উত্তর ছিল, ‘সময় হলে’ সব জানাবেন তিনি। তবে এরপর আর এনিয়ে মুখ খোলেননি তিনি।

বিভিন্ন বিষয়ে এরশাদের ভিন্ন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তখন রওশন বলেছিলেন, দলকে চাঙা করতে চেয়ারম্যানের অনেক কথাই বলতে হয়।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এবারও নাটকীয়তার জন্ম দেন নব্বইয়ের গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সামরিক শাসক এরশাদ।

দলে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠার পর আকস্মিকভাবে হাওলাদারকে সরিয়ে রাঙ্গাঁকে মহাসচিব করেন এরশাদ। পরে ১২ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে হাওলাদারকে আবার বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে যান।

ভোটের কয়েকদিন আগে ফিরলেও প্রচারে আর নামেননি তিনি। এর মধ্যে রংপুর-৩ আসনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন; যদিও ভোট দিতেই যাননি তিনি। জি এম কাদের লালমনিরহাট ও রওশন ময়মনসিংহ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বিদেশ থেকে ফেরার পর একবারের জন্য সাংবাদিকদের সামনে এসে এরশাদ বলেন, মহাজোট থেকেই তার দল নির্বাচনে অংশ নেবে। দলের অন্য প্রার্থীরা ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াবে। নিজেও ঢাকা-১৭ আসনে ভোট করা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।

কিন্তু ২৭ ডিসেম্বর ওই কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এরশাদ এক বিবৃতি পাঠিয়ে জাতীয় পার্টির সব প্রার্থীদের ভোটের মাঠে থাকার নির্দেশ দেন।

ক্ষমতা দখল করে জাতীয় পার্টি গঠন করা এরশাদ বরাবরই বলে থাকেন, তিনি এই দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং তার ইচ্ছায়ই এই দল চলবে।

পিবিএ/এমটি/এইচএইচ

আরও পড়ুন...